Book Review (বই মূল্যায়ন)
সাতকোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করোনি।
বাঙ্গালির
ইতিহাস পরাধীনতার ইতিহাস। বাঙালি সেই পাল
আমল থেকে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত কখনই স্বাধীন ছিল না। অন্যের উপর নির্ভর করা বা
অন্যের অধীনে চলা আমাদের মজ্জাগত স্বভাব। রবীন্দ্রনাথের উপরের দুই পংক্তি উদ্ধৃতির
মাঝেও তা স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান হয়। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ রচিত ‘সংগঠন ও বাঙালি’
একটি গবেষনাধর্মী বই যেখানে তিনি অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে
বাঙালি স্বাধীনতার এত বছর পরও সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরাধীনতার শেকল থেকে
মুক্ত হতে না পারার মূল কারণ হলো সাংগাঠনিক ব্যর্থতা।
অনেক
উদ্যমতার সাথে যে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে কেন সেটি দুই-এক বছর না যেতেই মুখ থুবরে
পড়ে? কেন আমাদের দেশে সফল সংগঠনের সংখ্যা হাতে গোনা এত স্বল্প? কেন সংগঠন
প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর সাথে সাথে সংগঠনের মৃত্যু ঘটে? সংগঠনের হাল ধরার জন্য কেন
যোগ্য উত্তরাধিকারী তৈরি হচ্ছে না? এ সব সাংগাঠনিক দূর্বলতার মূলে রয়েছে
আত্মপরতা-অর্থাৎ নিজের বাইরে আমরা কিছুই দেখতে চাই না, কিছুই বুঝতে চাই না। সব
কিছুর মাঝে নিজের স্বার্থটা আগে খুঁজি।
দশটি
অধ্যায়ের এই বইতে বাঙালির সাংগাঠনিক দূর্বলতার আরও কারণ দেখানো হয়েছে-ব্যক্তিগত
অসহায়তা, অক্ষমতা ও হীনমন্যতা। আমরা বাঙালিরা জানি শুধু কাঁদত - যা আমাদের মনকে
দূর্বল করে রাখে। আমাদের অক্ষমতা আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি জায়গায় ব্যর্থ করে
দিয়েছে। পরের ভালো দেখলে তাই আমরা কষ্ট পাই, বিষন্ন হয়ে পড়ি এবং হীনমন্যতায় ভূগি।
প্রয়োজনের
কারণে উদাহরণ টানার ক্ষেত্রে লেখক অসাধারণ নিপুণতা দেখিয়েছেন । ঈশপের গল্প,
ম্যাক্সিম গোর্কির উপন্যাস থেকে সরাসরি উল্লেখ সহ অনেক উদাহরণ লেখকের যুক্তিকে
স্পষ্টতর ও দৃঢ় করেছে। সাংগাঠনিক ব্যর্থতার মৌলিক কারণ হিসেবে লেখক উল্লেখ করেছেন বাঙালির
স্বাস্থ্যহীনতাকে যা আমাদেরকে নিস্ক্রিয় করে রেখেছে। লেখক এ প্রসঙ্গে নিজেই
উদ্ধৃতি দিয়েছেন-তিনি এ পর্যন্ত অনেক দেশে গিয়েছেন তবে বাঙ্গালির মত এত খারাপ
স্বাস্থ্যের মানুষ পৃথিবীর কোথাও দেখেন নি। স্বাস্থ্যহীন মানুষ কোনোকিছু নিয়ে
বেশিদিন লেগে থকতে পারে না। দীর্ঘমেয়াদী যাত্রার জন্য সুস্বাস্থ্যের খুব প্রয়োজন।
আমাদের
স্বাস্থ্যহীনতার মূল কারণ হলো- যে জাতি (ভেদ্দা নামক জাতি) হতে আমদের উৎপত্তি সে
জাতির শারীরিক ক্ষমতা সাধারণত কম ছিল। মৃদু ও বন্ধুভাবাপন্ন আবহাওয়া ও জাতীয় উদ্যোগের
অভাবও আমাদের স্বাস্থ্যহীনতার জন্য দায়ী। তাছাড়া আমাদের দেশে যে সব খেলাধুলা হয় সে
গুলোতে শারীরিক পরিশ্রম কম।
সবশেষে
লেখক সুপারিশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন- আমাদের দেশের সংগঠন গুলোর ভিত্তি সভাপতি কেন্দ্রিক
হওয়া উচিৎ। বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ্ধতির ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সংগঠন গুলো
শক্তিশালী হতে পারছে না।
মাওলা
ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত বইটির মূল্য মাত্র একশত টাকা। বইটির উপস্থাপনাশৈলী চমৎকার
। বিশেষ করে আমরা যারা সংগঠন অনুরাগী বইটি তাদের চিন্তা-চেতনার মাঝে নতুন মাত্রা
যোগ করবে।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন